সরকারি নিষেধাজ্ঞা | পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

 

ছবিঃ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন এবং বিক্রয় বন্ধে B.I.E এর আহ্ববান।

জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন এবং বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এই সিদ্ধান্ত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।


নিষিদ্ধ ঘোষিত গাছগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব:

  • ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ মাটি থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে, ফলে মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়।
  • পাতার বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান মাটিতে পড়লে তা বিষাক্ত হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়।
  • এই গাছের আশপাশে সহজে অন্য কোনো গাছ জন্মাতে পারে না।
  • দেশীয় পাখি, কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য প্রাণী এই গাছ থেকে বাসস্থান ও খাদ্য পায় না, ফলে এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে।


দেশীয় গাছের উপকারিতাঃ 

  • দেশীয় গাছগুলো স্থানীয় প্রাণী, পাখি, পতঙ্গ ও মাটির জীবের আবাসস্থল সরবরাহ করে।
  • দেশীয় প্রজাতির গাছ মাটির ক্ষয় রোধে সহায়ক এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
  • এই গাছগুলো স্থানীয় জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খেয়ে স্বল্প পরিচর্যায় টিকে থাকতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • দেশীয় গাছগুলো পানির চক্র সুষম করে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • দেশীয় গাছের সঙ্গে স্থানীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, লোককাহিনী ও ঐতিহ্য জড়িত।
  • অনেক দেশীয় গাছের ভেষজ গুণ রয়েছে, যা স্থানীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয় (যেমন নিম, অর্জুন, হরীতকী)।
  • স্থানীয় জনগোষ্ঠী দেশীয় গাছ রোপণ ও সংরক্ষণে উৎসাহিত হয় এবং এতে সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ে।
  • দেশীয় গাছ কাঠ, ফল, ফুল, বীজ, রেজিন ইত্যাদি উৎপাদন করে যা স্থানীয় বাজারে অর্থনৈতিক মূল্য যোগ করে।
  • ছায়া প্রদানকারী দেশীয় গাছগুলো কৃষি জমিতে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখে এবং মিশ্র চাষে সহায়ক।
  • দেশীয় গাছ সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ও কম খরচে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য।
  • সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ গাছ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করে।
  • দেশীয় গাছ জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যা ও খরার প্রভাব কমায়।


আহ্ববান:

পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, পরিবেশবিদগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সকল পর্যায়ের জনগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে: 

  • বনায়ন বা সবুজায়ন কর্মসূচিতে এখন থেকে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি বাদ দিয়ে স্থানীয়, পরিবেশবান্ধব এবং বহুমুখী উপকারী দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করুন।
  • দেশীয় প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ রোপণের মাধ্যমে দেশের প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে টেকসই ও সহনশীল রাখুন।
  • পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সকলে একযোগে কাজ করুন, দেশি গাছ লাগান, প্রকৃতি বাঁচান।
  • পরিবেশ রক্ষায় আজই সচেতন হোন, সক্রিয় হোন।

জনস্বার্থে:
পরিবেশবিদ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (বা.প.ই)

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন